দেশের অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে জনমত উপেক্ষা করে ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে অবিলম্বে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পরিষ্কার পানি সরবরাহের দাবি জানান। তারা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা ওয়াসার কার্যক্রমের শ্বেতপত্র প্রকাশেরও আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে উঠেছে। ঢাকা ওয়াসার পানি মূল্য বৃদ্ধি হলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়বে এবং পানির ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে থাকবে, যা জনজীবনকে আরও কঠিন করে তুলবে।

নেতারা উল্লেখ করেন, কোনো প্রকার গণশুনানি বা যৌক্তিক কারণ ছাড়াই গত ১৬ বছরে ১৬ বার ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছে। একই ধারা অনুসরণ করে চট্টগ্রাম ও খুলনা ওয়াসাও পানি মূল্য বাড়িয়েছে। অথচ এ সময়ে তারা সকলের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে।

নেতারা বলেন, আমাদের দেশ মিঠা পানির দেশ, তাই বিনা মূল্যে সুপেয় পানি পাওয়া দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের নীতির কারণে সাধারণ মানুষকে বোতলের পানি কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। একসময় প্রচলিত কথায় ‘পানির দামে’ বলতে কম দামে কিছু বোঝানো হতো, এখন সেটি আর নেই। অনেক হোটেলে বিদেশি পানি ছাড়া বিকল্প নেই। এই পানির আমদানিতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে। গ্রাম-গঞ্জেও পানির ব্যবসা অন্যতম ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসাসহ অন্যান্য ওয়াসাগুলো সুরম্য ভবন নির্মাণ, বড় বড় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ, বিদেশ ভ্রমণ, অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় খরচ করে চলেছে। সর্বত্র দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীনরা এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে পানির দাম বাড়িয়ে জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিবৃতিতে এসব ঘটনাকে পানি নিয়ে ডাকাতি উল্লেখ করে মিঠা পানির দেশে এ ধরনের কাজ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। দুর্নীতিবাজদের শাস্তিসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা ওয়াসার কার্যক্রমের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানানো হয়। নেতারা সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

নেতারা বিভিন্ন অঞ্চলে বিনামূল্যে সুপেয় পানি সরবরাহ, রাস্তার মোড়ে মোড়ে মেহনতি মানুষের জন্য পানি বুথ স্থাপন এবং বোতল পানি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান। পাশাপাশি পানি আমদানি বন্ধেরও দাবি জানান।

অবশেষে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান নেতারা।