ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় গৃহহীন হয়ে পড়া ফিলিস্তিনিরা অমানবিক অবস্থার মধ্যে বসবাস করছেন। এখানে শিশুরা কখনো কখনো সারা দিন না খেয়ে কাটায়, এবং হাজার হাজার মানুষ একটি মাত্র টয়লেট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন অক্সফাম গতকাল মঙ্গলবার এই সংকট নিয়ে সতর্ক করেছে।
সম্প্রতি গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় ইসরায়েলের হামলা তীব্র হয়েছে। এতে অন্যান্য স্থান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা এখন রাফা থেকেও পালাতে শুরু করেছেন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর তথ্য অনুযায়ী, রাফা থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ পালিয়ে গেছেন।
অক্সফাম জানাচ্ছে, গাজার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ এই অবরুদ্ধ উপত্যকার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ জায়গায় ঠাসাঠাসি করে বাস করছেন।
সংগঠনটি আরও বলেছে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদানের আশ্বাস দিলেও গাজার বেশিরভাগ স্থানই মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত। দুর্ভিক্ষের শঙ্কাও বাড়ছে।
অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে চালানো বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, গাজার ৮৫ শতাংশ শিশু প্রতি তিন দিনে অন্তত একদিন সারা দিন না খেয়ে কাটিয়েছে।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাফায় গত ৬ মে থেকে স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে মাত্র আটটি ত্রাণবাহী ট্রাক সেখানে ঢুকেছে।
রাফায় বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। মানুষ সাগরের পানির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
– মিরা, অক্সফামের কর্মী
অক্সফামের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক স্যালি আবি খলিল বলেন,
“যখন দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হবে, তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
গত সপ্তাহে ফ্রেঞ্চ টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার লোকজনের ক্ষুধার্ত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, দুর্ভিক্ষ এড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
৪ হাজার মানুষের জন্য একটি টয়লেট
এদিকে দক্ষিণ গাজার উপকূলীয় আল-মাওয়াসির মতো কিছু এলাকাকে ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। কিন্তু সেখানে পানি সরবরাহ বা স্যানিটেশন সেবার অভাব প্রকট।
অক্সফাম জানিয়েছে,
“আল-মাওয়াসিতে মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সেখানে ৫ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ১২১টি টয়লেট। অর্থাৎ একটি টয়লেট ব্যবহার করছেন গড়ে ৪ হাজার ১৩০ জন।”
আল-মাওয়াসিতে কাজ করা অক্সফামের কর্মী মিরা গত অক্টোবরে ইসরায়েল গাজা যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে সাতবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। রাফার পরিস্থিতিকে অসহনীয় বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন,
“এখানে বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। মানুষ সাগরের পানির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।”
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করেছে। এই নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।