সিলেটের জলবায়ু সাধারণভাবে পরিবর্তনশীল। আজ শুক্রবারের সকালে, সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীর তিনটি বিন্দুতে পানি প্রবাহিত হয়েছে অনেক উন্নত মাত্রায়। এর পাশাপাশি, অন্যান্য নদ-নদীর জলের প্রবাহ পরিবর্তনশীল, কখনো বাড়ছে এবং কখনো কমে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী, দীপক রঞ্জন দাশ বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেছেন যে, হালকা মেঘলা বায়ুর পরিবর্তেও আজ বৃষ্টি না পড়লেও পানির প্রবাহ কিছুটা কমে আসে। বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি পর্বত একসাথে হলে পরিস্থিতি আরো ভালো হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আবাসিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট এবং জকিগঞ্জ উপজেলায় অনেক গ্রামে জলাশয়ের প্রবাহ অত্যন্ত বেশি। এই পাঁচটি উপজেলায় অন্তত ৭০০টি গ্রামে জলাবদ্ধ হয়েছে। বীরানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার কিছু গ্রামও জলাবদ্ধ হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সাথে তিনটি সংযোগস্থাপনকারী রাস্তা দুদিন ধরে অসংখ্য বাড়ির পাশে অবস্থান করে। এই কারণে উপজেলার অবস্থা কিছুটা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নে পানি ভেসে গিয়েছে। এটা ফলে প্রায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন লোক প্রভাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, যেখানে মোট ৪ হাজার ৮০২ জন লোক অস্থায়ী আবাস পেয়েছেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, পানিবন্দী প্রান্তে বাসবাসিকদের সহায়তা চালানো হচ্ছে। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে খাবার এবং পরিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে, এবং জনগণের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে চিকিৎসক দল নিয়ে কাজ হচ্ছে।
এদিকে সিলেট নগরের পাশে প্রবাহিত সুরমা নদীর পানি বৃহত্তর অংশে আবেগ সৃষ্টি করেছে, এ ফলে নগরের অনেক অংশে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। গতকাল রাতে তালতলা, মেন্দিবাগ এবং মাছিমপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার প্রান্তিক অবস্থা দেখা গেছে যা আজও সত্ত্বরতা অধিকার করছে। সকালেও এই অঞ্চলে একই পরিস্থিতি দেখা গেছে।
সিলেটে অচানক বন্যা উত্থানের সময়ে বিএনপি প্রকাশ্যে উদ্ধার কাজে দ্রুত সচেতন হয়েছে। গতকালের সন্ধ্যায়, জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যাবলিত অবস্থায় বাসিন্দাদের উপযুক্ত সহায়তা নিশ্চিত করতে বিএনপির নেতারা স্থানীয় প্রশাসনের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। বানভাসি লোকদের প্রয়োজনীয় খাবার এবং নগদ টাকা প্রদানে বিএনপির নেতারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
বিএনপি নেতারা এ সময়ে প্রতিবাদ করেন, নদ-নদী খননের অভাবে বন্যা উত্থান হয়েছে। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে উপায় নেওয়া হয়েছে, যেন বানভাসি লোকদের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে। বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী এই অবস্থায় বলেন, যে পরিস্থিতিতে মানুষ পানিবন্দী হয়েছে, সরকার তাদের জন্য কোনো সুযোগ প্রদান করে নি। বর্ষায় ২০২২ সালের প্রায় ভয়াবহ বন্যায় বিএনপি সরকারের দিকে আবেগ জানিয়েছিল, কিন্তু সরকার তা মেনে নিয়েছে না।
খাবার এবং নগদ টাকা বিতরণের প্রক্রিয়ায় জেলা বিএনপির প্রতিনিধিদল প্রধানগণ হাজির ছিলেন, তারপরে তাদের নেতৃত্বে এ কাজে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি।
বন্যার প্রভাবে সংকটে পড়া মানুষদের সাথে সহযোগিতা নিয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, পানিবন্দী লোকদের প্রাণপ্রিয় উদ্ধারের জন্য তারা সরকারের সাহায্যের প্রত্যাশা করছেন, কিন্তু সহায়তা পেতে পেতে তাদের জন্য আর্থিক এবং মানসিক পীড়া অধিক হয়ে উঠছে। সরকার যেমন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি, তাই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায় নেই। বিএনপি জনগণের দল, এবং এদের পাশে যেমন অতীতে ছিল, ঠিক তেমনভাবে বন্যার্তদের পাশে রয়েছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সরকারের প্রতি আবেগ নির্বাচিত হয়ে বলেন, পানিবন্দী মানুষের জন্য তাড়াতাড়ি উদ্ধার প্রস্তুত করুন। সিলেটের প্লাবিত এলাকার উপকূলে বন্যাদুর্গত অবস্থা ঘোষণা করুন। পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার কাজে সরকার অবশ্যই নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়াও, বানভাসি লোকদের সহানুভূতি ও সাহায্যের জন্য সরকার প্লাবিত এলাকা ঘোষণা করবে। প্রতিটি প্লাবিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রের তাত্ক্ষণিক প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিশ্চিত করবেন।
বিএনপির ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট মহানগর শাখা গতকাল বিকেলে জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দী মানুষের উপকূলে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। এ সময় সংগঠনের মহানগর শাখার সভাপতি সাঈদ আহমদ, জালালাবাদ ইমাম সমিতির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল হাফিজ মাওলানা হোসাইন আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল, জৈন্তিয়া কেন্দ্রীয় পরিষদ নামের একটি সংগঠন সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবর এক স্মারকলিপি জারি করেছে, যাতে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর এবং কানাইঘাট উপজেলাকে বন্যাদুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সাথে এই এলাকায় যত্ন সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অনুরোধ করা হয়েছে। এই কাজে সংগঠনের সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন বেলাল এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, আগামীকাল শনিবার একটি সাধারণ সভায় সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদে, সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনের সংসদ সদস্য এ কে আব্দুল মোমেন আলম এক ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই কর্মসূচিতে সংসদ সদস্য নিজেই সম্পাদক।