রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্ধারিত সূচকের চেয়ে বেশি, যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
দুই সিটির মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে মশার ঘনত্ব বেশি। বিশেষত, বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি সর্বাধিক।
আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ‘মৌসুমপূর্ব এডিস সার্ভে ২০২৪-এর ফলাফল অবহিতকরণ সভা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপ চালানো হয়।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৯টি ওয়ার্ডের ৩,১৫২টি বাড়িতে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক শেখ দাউদ আদনান জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি জানান, ৩,১৫২টি বাড়ির মধ্যে ৪৬৩টিতে এডিস মশার লার্ভা ও পিউপা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বহুতল ভবনে ৪২.৩৩ শতাংশ, স্বতন্ত্র বাড়িতে ২১.৬ শতাংশ, নির্মাণাধীন বাড়িতে ২১.৬ শতাংশ এবং সেমিপাকা বাড়িতে ১২.৭৪ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। জরিপে দেখা যায়, ঢাকার দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি, যা নির্দেশ করে যে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। এই ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে দক্ষিণ সিটির ২৯টি ও উত্তর সিটির ১২টি ওয়ার্ড রয়েছে।
উত্তর সিটিতে ব্রুটো ইনডেক্স ১৬.৩৯ শতাংশ এবং হাউস ইনডেক্স ১৪.৩০ শতাংশ। দক্ষিণ সিটিতে ব্রুটো ইনডেক্স ১৮.৮৯ শতাংশ এবং হাউস ইনডেক্স ১৪.৯৮ শতাংশ।
জরিপে আরও জানা যায়, দুই সিটির মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দক্ষিণ সিটির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বাধিক। দক্ষিণ সিটির অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হল ৪, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩। উত্তর সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হল ১২, ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭ ও ৩৩।
জরিপে আরও বলা হয়, মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে প্লাস্টিকের ড্রামে ১৮ শতাংশ, মেঝেতে জমানো পানিতে ১৫ শতাংশ এবং বালতিতে জমানো পানিতে ১৪ শতাংশ চিহ্নিত হয়েছে।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সব পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন,
“ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কারও একার কাজ নয়। এটার সঙ্গে যুক্ত সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ লাগবে। জনগণকেও সচেতন হতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন প্রমুখ।